আগামী ১৭ এপ্রিলের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে। তাই কৃষকের হাওরের ধান দ্রুত কাটার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে গত দুই সপ্তাহ ধরে সুনামগঞ্জে একের পর এক বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে বোরো ধান তালিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা। হাওরপাড়ের মানুষেরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে ফসল রক্ষায় চেষ্টা চালায়। তাতেও তেমন কাজ হয়নি। তবে গত তিন দিন ধরে নদ-নদী ও হাওরের পানি কমছে। এখনও হুমকির মুখে রয়েছে হাওরের শতাধিক ফসল রক্ষা বাঁধ। এখনও হাওরের ধান পাকেনি। কাঁচা এবং আধাপাকা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।

বাংলাদেশ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড হতে প্রাপ্ত পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলতি সপ্তাহে স্বাভাবিক থেকে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। রোববার (১০ এপ্রিল) থেকে আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল, তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম (বরাক অববাহিকা) এবং মেঘালয় প্রদেশে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

এতে ১৭ এপ্রিল নাগাদ উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা, লুভাছঢ়া, সারিগোয়াইন, ধলাগাং, পিয়াইন, ঝালুখালী, সোমেশ্বরী, ভুঘাই-কংস, ধনু-বাউলাই নদ-নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার কিছু অংশে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর-১) জহিরুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিন নদ-নদীসহ হাওরের পানি কমছিল। কিন্তু পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনার কথা। এমনিতে পাহাড়ি ঢলে হাওরে প্রচুর পানি। অনেক জায়গায় বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকেছে। এ অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিলে হাওরাঞ্চলের বোরো ধান ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিলে বোরো ধানের ক্ষতি আশঙ্কা রয়েছে। তাই হাওরের ধান কৃষকের দ্রুত কাটার অনুরোধ করা হয়েছে। হাওরের কোথাও ফসল রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দিলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে। হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান তিন।

সুনামগঞ্জের সদর, দিরাই, শাল্লা, ধর্মপাশা, তাহিরপুর উপজেলাসহ অধিকাংশ উপজেলার ১৪টি হাওরে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে। এতে হাওরের হাজার হাজার হেক্টর জমির কাঁচা ও আধাপাকা ধান ডুবে গেছে। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, শনিবার (৯ এপ্রিল) পর্যন্ত ১৪টি হাওরের ৫ হাজার ১০ হেক্টর জমি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৪৬৭ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম।